জীবিত মর্জিনাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল
জীবিত মর্জিনাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল
আপলোড সময় :
২৯-০৯-২০২৪ ১২:৪৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট সময় :
২৯-০৯-২০২৪ ১২:৪৫:৫৫ পূর্বাহ্ন
গত পাঁচ বছর ধরে বয়স্ক ভাতাভোগী ছিলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী রতনপুর গ্রামের মর্জিনা বেওয়া (৬৫)। বার্ধক্য নেমে আসায় একা চলাচল করতে পারেন না তিনি। আর তাই সর্বশেষ যাচাইবাছাইয়ের সময় অসুস্থতার কারণে মর্জিনা বেওয়া অসুস্থ হয়ে বাড়িতে ছিলেন, ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারেননি তিনি। আর এ কারণে তাকে মৃত দেখিয়ে কার্ড বাতিল করেন কর্তৃপক্ষ।
বয়স্ক ভাতার টাকা না আসায় সমাজসেবা কার্যালয়ে গেলে জানতে পারেন, মর্জিনা বেগমকে ‘মৃত’ দেখিয়ে তার ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। আর নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতেই সশরীরে হাজির হয়েছেন মর্জিনা। অথচ, তাকে কীভাবে বা কারা মৃত দেখাল কিছুই জানেন না তিনি।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীরা জীবিত আছেন কি না, প্রতিবছর তা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে যাচাই-বাছাই করা হয়। ছয় মাস আগে ধরঞ্জী ইউনিয়নে ভাতাভোগীদের যাচাইবাছাই করা হয়। এরপর পরিষদ থেকে সমাজসেবা কার্যালয়ে ভাতাভোগীদের তথ্য পাঠানো হয়। সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ভাতাভোগীদের তথ্য হালনাগাদ করে ভাতা চালু বা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। মর্জিনা বেওয়ার মারা যাওয়ার তথ্য ইউপি কার্যালয় থেকে দেওয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মর্জিনা বেওয়া কালবেলাকে জানান, পাঁচ মাস ধরে তিনি ভাতা পান না। কেন তিনি ভাতা পান না তা জানতে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গেলে কার্যালয়ের লোকজন কাগজপত্র ঘেঁটে জানান, তিনি মারা গেছেন। এ জন্য তার ভাতা বাতিল করা হয়েছে। একথা শুনে অবাক হন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান নাকি তার মৃত্যুর সনদও দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ভাতার টাকায় তিনি ওষুধ কিনে খান। আর সংসারও চলে এই টাকায়। ভাতা বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে দিন পার হচ্ছে। এ সময় তার কার্ডটি পুনরায় চালুর অনুরোধও করেন তিনি।
বৃদ্ধা মর্জিনা বেগমের নাতি মো. আরমান হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমার দাদি বয়স্কভাতার টাকা পাচ্ছিল, যা দিয়ে তিনি ওষুধ কিনে খেতেন। কিন্তু হঠাৎ করে প্রায় দুই বছর থেকে আমার দাদির ভাতার টাকা আর আসে না। বিষয়টি সমাজসেবা কার্যালয়ে জানালে, কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র ঘেঁটে জানান আমার দাদি মারা গেছে। অথচ আমার দাদি তো বেঁচে আছে। তাহলে কাগজপত্রে আমার দাদি মারা গেল কীভাবে? তিনি আরও বলেন, পরে ধরঞ্জী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে খোঁজ নেই। সেখানকার তালিকায়ও দাদিকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি পুনরায় ভাতা চালুর ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওই এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, ভাতাভোগীদের তথ্য যাচাই করতে সশরীরে ইউপি কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে মাইকিং করা হয়েছিল। তখন মর্জিনা হাজির হননি। যারা উপস্থিত ছিলেন না, তাদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে বিষয়টি জানাজানির পর ইউপি চেয়ারম্যান সমাজসেবা অফিসে মর্জিনার ভাতা চালুর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। হয়তো আগামী মাস থেকে ওই বৃদ্ধার ভাতা পুনরায় চালু হবে।
পাঁচবিবি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদের তালিকায় মর্জিনা বেওয়াকে মৃত দেখানো হয়েছে। এজন্য তার ভাতার কার্ড বাতিল করে নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়। তবে মর্জিনার ভাতা আবার চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : News Upload
কমেন্ট বক্স